banglatraffic.com
Saturday , 3 October 2020 | [bangla_date]
  1. 1
  2. all
  3. Blog
  4. hello world
  5. Hello world!
  6. New
  7. news
  8. Online Dating
  9. Paribahis
  10. Update Windows Driver
  11. Микрокредит
  12. অন্যান্য
  13. অপরাধ
  14. অর্থনীতি
  15. আন্তর্জাতিক

ডাকাতের জীবন বদলে দিলো রাতারগুল

প্রতিবেদক
News24
October 3, 2020 12:43 pm

পেশা ছিল ডাকাতি। এ বাড়ি ও বাড়ি লুট করা এবং মদ ও জুয়া ছিল তার যাপিত জীবন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে সবকিছু। ডাকাতি ছেড়ে হয়েছেন পরিশ্রমী ও সৎ ব্যবসায়ী। তিনি এখন ‘বাংলার আমাজন’ হিসেবে পরিচিত রাতারগুলের পরিচিতমুখ আছাফ আলী। আসলে তার জীবনের এ বাঁকবদলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে রাতারগুলই।

সিলেটের ‘ফ্রেশওয়াটার সোয়াম্প ফরেস্ট’ বা জলাবন রাতারগুলে গেলেই দেখা মেলে আছাফ আলীর। রাতারগুলের ওয়াচ-টাওয়ারের পাশেই দীর্ঘদিন ধরে ডাব বিক্রির ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।যারা রাতারগুলে গেছেন, তাদের অনেকেই এই আছাফ আলীর কাছ থেকে ভাসমান নৌকায় ডাব কিনে খেয়েছেন। কিন্তু জানা হয়নি আছাফ আলীর জীবনকথা, সাধারণ ডাব বিক্রেতার মতোই দেখেন তাকে। অবশ্য সাদাসিধে মধ্য বয়সের মানুষটাকে দেখে কারও মনে হওয়ার কথা নয় যে, তিনি ছিলেন একসময়ের দুর্ধর্ষ ডাকাত।

অন্যের সম্পদ লুট করা ছিল যার পেশা, তিনি কীভাবে এমন বদলে গেলেন? এটাও একটা রহস্য। আছাফ আলীর ভাষ্যমতে, তরুণ বয়সে রক্ত গরম ছিল। দাপট দেখানোর নেশা পেয়ে বসেছিল। সংসারেও ছিল টানাপোড়েন। পারিপার্শ্বিক নানা কারণে জড়িয়ে পড়েন ডাকাতিতে। সঙ্গীদের সঙ্গে মিশে করতে থাকেন নেশা।

বিপথে চলে যাওয়া ছেলেকে ফিরিয়ে আনতে বিয়ে দেন বাবা। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। ডাকাতি ও মদের নেশা ছাড়তে পারছিলেন না। এক সময় আছাফ আলীকে বিদেশ পাঠিয়ে দেন বাবা। কয়েক বছর বিদেশ থেকে আবার দেশে ফিরে আসেন। ততো দিনে ভ্রমণপিপাসুদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে রাতারগুল।

দলে দলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাতারগুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসতে থাকেন নানা বয়সের পর্যটকরা। দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশিদের কাছেও জনপ্রিয় ওঠে রাতারগুল। এটাকেই কাজে লাগালেন আছাফ আলী। অতীত ভুলে হয়ে গেলেন ব্যবসায়ী। রাতারগুলে শুরু করলেন ডাব বিক্রি।দিন, মাস, বছর গড়াতে থাকে। বাড়তে থাকে আছাফ আলীর আয়। এখন স্বাভাবিক জীবনে পরিবার নিয়ে আছাফের সুখের সংসার।

এ বিষয়ে আছাফ আলী বলেন, অতীত ভুলে গেছি। বর্তমানই এখন আমার সব। সাত বছর ধরে এই জায়গাটায় ডাব বিক্রি করছি। ডাব বিক্রির টাকায় যে আয় হয়, তাতে খুব ভালোভাবে সংসার চলে যায়। করোনার আগে দিনে প্রতিপিস ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে ৫০০-৭০০ ডাব বিক্রি হতো। এখন কিছুটা কম হচ্ছে। তবে আস্তে আস্তে রাতারগুলে মানুষের যাতায়াত বাড়ছে। ফলে বাড়ছে বিক্রিও।

শুধু আছাফ আলী নন, রাতারগুল জীবনের বাঁক বদলে দিয়েছে আরও অনেকের। রাতারগুলে যেতে ভ্রমণপিপাসুদের যেতে হয় নৌকায় চেপে। রোদের তাপ ও বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পেতে অনেকে ব্যবহার করেন ছাতা। এ কারণেই নৌকা ও ছাতা আয়ের পথ হিসেবে হাজির হয়েছে অনেকের জীবনে। কেউ নৌকা চালিয়ে, কেউ ছাতা ভাড়া দিয়েই সংসারের খরচ যোগাড় করে ফেলছেন।

এমনই একজন নৌকা চালক মো. আলামিন। তিনি বলেন, নৌকা চালিয়ে যে আয় হয় তার ওপর ভিত্তি করেই চারজনের সংসার চলে। আমার মতো অন্তত ৫০ জন আছেন এখানে নৌকা চালিয়ে জীবন চালান। এখন প্রতিদিন নৌকা চালিয়ে সব খরচ বাদ দিয়ে এক হাজার টাকার মতো আয় হয়। করোনার আগে আয় আরও বেশি হতো।

সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাটের ফতেহপুর ইউনিয়নে অবস্থিত রাতারগুল। সিলেট শহর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে ৩৩২৫ দশমিক ৬১ একর আয়তনের ‘ফ্রেশওয়াটার সোয়াম্প ফরস্টে’ বা জলাবনটি ‘বাংলার আমাজন’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। বনটির ৫০৪ একর ১৯৭৩ সালে বন্যপ্রাণীদের অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

সরকারি তথ্য মতে, সারা পৃথিবীতে স্বাদুপানির জলাবন আছে মাত্র ২২টি, এর মধ্যে ভারতীয় উপমহাদেশে আছে দুটি। একটা শ্রীলঙ্কায়, আর অন্যটি এই রাতারগুল। রাতাগাছ নামে একধরনের উদ্ভিদের দেখা মেলে রাতারগুলে। স্থানীয় ভাষায় এটি মুর্তা নামে পরিচিত। এ গাছের নামানুসারে বনটির নাম হয়েছে রাতারগুল। যদিও এ বনে সবচেয়ে বেশি জন্মায় করচ গাছ।

কীভাবে দেখবেন রাতারগুলের সৌন্দর্য
সিলেট থেকে দুইভাবে রাতারগুল যাওয়া যায়। নগরীর পাশের খাদিম চা বাগান ও খাদিমনগর জাতীয় উদ্যানের ভেতরের রাস্তা দিয়ে খুব অল্প সময়ে রাতারগুল পৌঁছানো যায়। এইপথে সিএনজি অটোরিকশা কিংবা জিপ নিয়ে শ্রীঙ্গি ব্রিজ যেতে হয়। শ্রীঙ্গি ব্রিজ থেকে রাতারগুল জঙ্গলে ঢোকার জন্য ছোট ছোট নৌকা ভাড়ায় পাওয়া যায়।

আবার অন্যপথে সিলেট থেকে জাফলংগামী গাড়িতে গিয়ে সারিঘাট নামতে হয়। সেখান থেকে বেবিট্যাক্সিতে করে গোয়াইনঘাট বাজারে এসে নৌকা দিয়ে রাতারগুল যাওয়া যায়।

একটা নৌকার ভাড়া ৭০০-৮০০ টাকা। এই নৌকায় একসঙ্গে ৬-৭ জন বসা যায়। নৌকায় বসে বনের ভেতর ঘুরতে সহ্য করতে হবে সূর্যের খরতাপ। হুট করে এসে যেতে পারে বৃষ্টি। তাই বাড়তি সাবধানতার জন্য নিয়ে নিতে পারেন ছাতা। যে ঘাট থেকে নৌকা ভাড়া করা হয়, তার পাশেই একদল ছাতা নিয়ে বসে থাকে ভাড়া দেয়ার জন্য। একটি ছাতার জন্য ঘণ্টায় ভাড়া দিতে হয় ২০ টাকা।

নৌকায় চেপে রাতারগুলের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলে কিছু দূর যেতেই পড়বে একটি ছোট ব্রিজ। এই ব্রিজেও আছে অ্যাডভেঞ্চার। নৌকার মধ্যে শুয়ে পার হতে হয় ব্রিজটি। পানি থেকে ব্রিজের নিচের উচ্চতা এতো কম, নৌকায় বসে থাকলে মাথা বেঁধে যাবে। মাঝি নৌকার এক মাথা ব্রিজের নিচে ঢুকিয়ে দিয়ে তার পাশের মাথা বের করার জন্য নৌকার ওপর শুয়ে পড়ে ব্রিজে দ্রুত ধাক্কা দেন। এক ধাক্কায় নৌকা ব্রিজ পার হয়ে যায়। বনের ভেতর ঢোকার আগেই এ চিত্র পর্যটকের মন জয় করে নিতে পারে।

ব্রিজটি পার হয়ে আর কিছু দূর গেলেই কাঙ্ক্ষিত সেই জলাবন। গাছ-গাছালির ঘন নির্জনতা খুব সহজেই কেড়ে নেবে মন। পানিতে ডুবে থাকা গাছের মাঝ দিয়ে বয়ে চলা খালের ভেতর দিয়ে যত এগোবেন ততোই অ্যাডভেঞ্চার। এক সময় পৌঁছে যাবেন ওয়াচ-টাওয়ারে।

প্রায় ছয় তলার এই ওয়াচ-টাওয়ারে উঠে এক সময় সমগ্র রাতারগুলের সৌন্দর্য দেখা যেত। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে এখন পর্যটকদের ওয়াচ-টাওয়ারের উপরে উঠতে দেয়া হয় না। তবে ওয়াচ-টাওয়ারটির নিচের ফ্লোরে দাঁড়ানো যায়।

স্থানীয়দের ভাষ্য, মাছরাঙা, বক, ঘুঘু, ফিঙে, বালিহাঁস, টিয়া, বুলবুলি, পানকৌড়ি, ঢুপি, চিল এবং বাজপাখিসহ ১৭৫ প্রজাতির পাখি আছে বনের ভেতরে। পাখি আর পতঙ্গের ভিড়ে দেখা যায় বানর। এক গাছ থেকে আরেক গাছে লাফিয়ে বেড়ানো বানররা মাঝেমধ্যে পর্যটকদের নৌকায়ও উঠে আসে। আছে সাপ, জোঁক, উদবিড়াল, কাঠবিড়ালী, মেছোবাঘও।

ঢাকা থেকে ছুটে যাওয়ার ক্লান্তি নিমিষে ভুলিয়ে দেয় রাতারগুলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। প্রকৃত যেন এখানে তার আপন সাজে সেজেছে এক অপার মহিমায়।

সর্বশেষ - অন্যান্য

আপনার জন্য নির্বাচিত