করোনা নেই এ কথা ভাবার কোনো কারণ নেই। বরং দ্বিতীয় দফা সংক্রমণের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এজন্য এখনই প্রস্তুতির কথাও বলা হচ্ছে। এ লক্ষে এখন থেকেই কাজ করতে হবে। প্রাণঘাতি করোনা মহামারি থেকে যে কোনো মূল্যে রক্ষা পেতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সকলেই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে। সে জন্য হয়তো আমরা এটা মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি। সামনে শীত, আরেকটু হয়তো খারাপের দিকে যেতে পারে। তবুও আমাদের এখন থেকে প্রস্তুত থাকতে হবে। গত রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে অনুদান নেয়ার সময় তিনি এসব কথা বলেন। এদিকে ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দ্বিতীয় দফায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশেও পুনরায় সংক্রমণের আশঙ্কার কথা জানিয়েছে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। কমিটি দ্বিতীয় দফার সংক্রমণ দ্রুত নির্ণয়ের লক্ষ্যে সতর্ক থাকা এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে করণীয় বিষয়ে দ্রুত রোডম্যাপ প্রস্তুত করে সেই মোতাবেক পূর্ণ প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। কমিটির চেয়ারপারসন অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লার সভাপতিত্বে গত রোববার অনুষ্ঠিত ২০তম অনলাইন সভায় এ পরামর্শ দেওয়া হয় বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
সভায় জাতীয় পরামর্শক কমিটির সদস্যরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এ বি এম খুরশীদ আলমের সঙ্গে এ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। আলোচনায় উল্লেখ করা হয়, কোভিড-১৯ সংক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে চ্যালেঞ্জ থাকলেও বর্তমানে পরীক্ষার সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং হাসপাতালের সেবার পরিধি ও মান উন্নয়ন করা হয়েছে। তবে যেসব দিকে এখনো ঘাটতি রয়েছে, সেগুলো পূরণ করে পূর্ণ প্রস্তুতি নিতে হবে। জাতীয় কমিটির সদস্যরা বলেন, কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশে সংক্রমণের হার নিম্নমুখী হলেও এ হার এখনো স্বস্তিকর মাত্রায় পৌঁছায়নি। কোভিড-১৯ চিকিৎসায় এক্স-রে ও রক্তের কিছু পরীক্ষার ভূমিকা রয়েছে উল্লেখ করে কমিটি জানায়, শহরের হাসপাতালগুলোয় এ ব্যবস্থা থাকলেও জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে তা বৃদ্ধি করা দরকার। দ্বিতীয় দফার সংক্রমণ দ্রুত নির্ণয়য়ের লক্ষ্যে বর্ধিত হারে টেস্ট করা প্রয়োজন। করোনার নমুনা পরীক্ষার জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে পদক্ষেপ নিতে হবে। কমিটির এই পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
বাস্তবতা হচ্ছে, করোনার সংক্রমণ থেমে নেই। থেমে নেই মৃত্যুও। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যে তথ্য দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে- দেশে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সাড়ে তিন লাখ ছাড়িয়ে গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন আরও এক হাজার ৭০৫ জন। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত সংখ্যা দাঁড়াল তিন লাখ ৫০ হাজার ৬২১ জনে।
এদিকে সারাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে আরও ৪০ জন মারা গেছেন। এদের মধ্যে পুরুষ ২৭ জন ও নারী ১৩ জন। হাসপাতালে ৩৭ জন, বাড়িতে দুইজন এবং মৃত অবস্থায় একজনকে হাসপাতালে আনা হয়। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল চার হাজার ৯৭৯ জনে।
এ অবস্থায় সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হলেও মানুষজন এ ব্যাপারে উদাসীন। বিশেষ করে গণপরিবহনে মাস্ক পরার কোনো বালাই নেই। ঘন ঘন হাত ধোয়ার বিষয়টি কতটা মানা হয় সেটিও প্রশ্ন সাপেক্ষ। নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাও অত্যন্ত জরুরি। সংশ্লিষ্ট সকলকে এ ব্যাপারে সচেতন এবং দায়িত্বশীল হতে হবে।