করোনাভাইরাসের কারণে সাত মাসের বেশি সময় ধরে দেশে আটকা পড়ে আছেন বিভিন্ন দেশে কাজ করতে যাওয়া প্রবাসীরা। এর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রবাসীদের সংখ্যাগরিষ্ঠ। চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী ভাইরাসটির কারণে আমিরাতের বিভিন্ন দেশে নেওয়া হয়েছে নানা কঠোর পদক্ষেপ। দেশগুলোতে ঢোকা বা বের হওয়া নিয়ে পড়তে হচ্ছে নানা সমস্যায়। যে কারণে, দেশে অবস্থানরত আমিরাত প্রবাসীরা রয়েছেন চরম উৎকণ্ঠায়। সমাধানে আমিরাত সরকারের সঙ্গে বৈঠক চান রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ আবু জাফর।





করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় জুলাই মাসের শুরু থেকে আমিরাত সরকার কঠোর যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে রেসিডেন্স ভিসাধারীদের ‘আইসিএ’ এবং ‘জিডিআরএফএ’ অ্যাপ্রুভালের মাধ্যমে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। এ লক্ষে গত ১২ জুলাই থেকে ভিসা সংক্রান্ত সব ধরনের প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু করেছে আমিরাত। বাতিল করেছে করোনাকালীন দেওয়া সব রকম সুবিধা। যদিও আমিরাতের বাইরে থাকা রেসিডেন্স ভিসাধারীরা ৬ মাসের বেশি হলেও দেশে প্রবেশ ও জরিমানা ছাড়া ভিসা নবায়ন করতে পারবেন। তবে যেকোনো সময় এটি পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। আমিরাতের মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে গালফ নিউজ।





এ নিয়ে বিশাল সমস্যায় পড়েছেন প্রবাসীরা। আবুধাবির আল মিরাকি কোম্পানির জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইমরান হোসেন জানান, ইনভেস্টমেন্ট ও পার্টনার ভিসা ছাড়া বাকী সাধারণ প্রফেশনের হাজার হাজার রেসিডেন্স ভিসাধারীরা বার বার আবেদন করার পরও আইসিএ অ্যাপ্রুভাল না পাওয়ায় দেশে আটকে আছেন। যারা আইসিএ এবং জিডিআরএফএ অ্যাপ্রুভাল পেয়েছেন; তাদেরকে রিটার্ন টিকিট দিয়ে আসতে না দিয়ে নতুন কিনতে বাধ্য করছে বিমান কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া করোনাভাইরাসের টেস্টে বেশি টাকা আদায়, যথাসময়ে রিপোর্ট না পাওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।





এসব ব্যাপারে গত কয়েকমাসে আমিরাতে ফেরা বিভিন্ন প্রবাসী নানা অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি জানতে চেয়ে আমিরাতস্থ বিমান কার্যালয়ের এক ঊর্ধতন কর্মকর্তার কাছে প্রশান করা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, বর্তমান টিকিটের মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করে রিটার্ন টিকেট দিয়ে প্রবাসীদের আসতে দেওয়া হচ্ছে। যারা রিটার্ন টিকিটে আসতে পারবেন না বলছেন, তাদের উচিত ছিল অভিযোগ করা।





তিনি আরও বলেন, আমিরাত হতেও সমস্যা হচ্ছে। যাত্রীদের সব ডকুমেন্টস ঠিক থাকার পরও কারও কারও বোর্ডিং পাস ইস্যু করা হচ্ছে না। তাদের অ্যাডভান্স প্যাসেঞ্জার ইনফরমেশনের নিয়ে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। আইসিএ অ্যাপ্রুভাল থাকার পরও কিছু যাত্রীকে অনুমতি দিচ্ছে না আমিরাত সরকার। এয়ারপোর্ট থেকেও অনেককে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অনেক প্রবাসীদের শারজাহ, আজমান, ফুজিরা, ওমর কইয়াম ও রাস আল খাইমা প্রবাসীদের ইনস্যুরেন্স বাধ্যতামূলক নয়। তবে এখন এ কারণেও সমস্যা হচ্ছে। অনেকে আসার অনুমতি পাচ্ছেন না।





প্রবাসীদের চলমান সমস্যা নিয়ে রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ আবু জাফরের সঙ্গে কথা হলে আমাদের সময়কে তিনি বলেন, ‘প্রবাসীদের সমস্যা সমাধানের জন্য আমিরাত সরকারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করছি এবং সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আগামী সপ্তাহে আমিরাত সরকারের সাথে বৈঠকের আবেদনও করেছি। অনুমতি পেলে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলবো।’





রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমিরাত সরকার এবং আন্তর্জাতিক নির্দেশনা মেনেই আমাদের সব কাজ করতে হয়। করোনাভাইরাসের কারণে অনেক কোম্পানির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং চাকরির ঘাটতি দেখা দিতে পারে তাই আমিরাত সরকার অভিবাসীদের প্রবেশের ক্ষেত্রে যাচাই বাছাই করতে পারে। সেটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। আমি শুধু বলবো দেশে এবং প্রবাসে অবস্থানরত সবাই ধৈর্য্য ধরুন।’ আপদ কালীন সময় পার হয়ে গেলে সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।





বিমানের টিকিট জটিলতা ও দেশে করোনা পরীক্ষায় প্রবাসীরা বৈষম্যে স্বীকার- এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মুহাম্মদ আবু জাফর বলেন, ‘প্রবাসীরা লিখিত অভিযোগ করলে বিষয়টি দেশে অবিহিত করা হবে।’ প্রবাসীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা দূতাবাস এবং কনস্যুলেটের উপর আস্থা রাখুন। আমরা সব সময় প্রবাসীদের সেবায় নিয়োজিত আছি।’