ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শি’ক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এলাকা থেকে ফুলবিক্রেতা জিনিয়াকে (৯) অ’পহ’রণের অ’ভিযোগে নূর নাজমা আক্তার ওরফে লুপা তালুকদারকে (৪২) গ্রে’প্তার করেছে ঢাকা মহানগর পু’লিশের (ডিএমপি) গো’য়েন্দা শাখা (ডি’বি)। ওই না’রী নি’জেকে সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দেন।
জিনিয়ার অ’পহ’রণ র’হস্য উদঘা’টনে বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) লুপাকে আ’দালতের মাধ্যমে দুদিনের রি’মান্ডে নিয়ে জি’জ্ঞাসাবাদ শুরু করেছেন ডি’বি কর্মক’র্তারা। অ’পহ’রণ ঘ’টনায় ত’দন্ত কর্মক’র্তারা বলছেন, তিনি জিনিয়াকে অ’পহ’রণ করেছিলেন টাকার লো’ভ দেখিয়ে। কোনো পা’চারকারী চ’ক্রের স’ঙ্গে লুপার যোগাযোগ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
লুপা দা’বি করেছেন, তিনি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাংবাদিকতা করেছেন। তার ফেসবুক প্রোফাইল বলছে, তিনি একজন রাজনৈতিক নেতা, উদীয়মান কবি এবং একটি এনজিওতে চাকরি করেন। ক্ষ’মতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ছবি দেখা আছে অনেক।
গত রোববার (৬ সেপ্টেম্বর) রাতে নারায়ণগঞ্জ থেকে জিনিয়াকে উ’দ্ধার করে পু’লিশ। আর ফতুল্লার আমতলা এলাকা থেকে গ্রে’প্তার করা হয় লুপাকে। এ ঘ’টনায় শাহবাগ থা’নায় দা’য়ের করা অ’পহ’রণ মা’মলায় লুপা এখন দুই দিনের রি’মান্ডে। জানা যায়, একবার লুপাকে ট্রি’পল মা’র্ডার কে’সে অ’ভিযুক্ত করা হয়েছিল।
অ’ভিযোগ আছে জা’লিয়াতির। লুপার ফেসবুক প্রোফাইলে উল্লেখ রয়েছে, তিনি অ’গ্নি টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাংলাদেশ আওয়ামী পেশাজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক।
বিভিন্ন সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল এবং টিভি চ্যানেলে সিনিয়র ক্রা’ইম রিপো’র্টার ছিলেন বলে লুপার দা’বি। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের এবং ঢাকা ইউনিয়নের সদস্য বলেও পরিচয় দিতেন। শুধুমাত্র মোহনা টিভির একটি বিজনেস কার্ড দিয়েছেন। তার দা’বি, মোহনা টিভিতে তিনি একবার কাজ করেছেন।
তার ফেসবুক প্রোফাইলে দেখা যায়, দু’র্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ ম’ন্ত্রণালয় থেকে সাইক্লোন প্রস্তুতি প্রোগ্রাম (সিপিপি) পুরষ্কার ২০১৯ গ্রহণ করছেন। লুপা যে ফেসবুক পেজে ক্ষ’মতাসীন দলের নেতা, ম’ন্ত্রীদের সঙ্গে ছবি পোস্ট করেছেন।
অ’পহ’রণ স’ম্পর্কে কর্মক’র্তাদের লুপা বলেছেন, জিনিয়ার প্রতি সহানুভূতি তৈরি হওয়ায় তাকে বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তবে কর্মক’র্তাদের ধারণা, লুপার উদ্দেশ্য ভিন্ন হতে পারে। মা’নব পা’চারকারী দলের স’ঙ্গে যোগাযোগ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।
ডি’বির হা’তে গ্রে’প্তারের পর থেকেই ফেইসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লুপাকে নিয়ে শুরু হয় আলো’চনা-সমালো’চনা। এরই মধ্যে তার বিষয়ে মিলেছে চা’ঞ্চল্যকর তথ্য। সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, সাং’বাদিক পরিচয়ে লুপা বে’পরোয়া জী’বনযাপন করেন। মোতালেব প্লাজার পেছনে একটি ফ্ল্যাটে থাকেন তিনি।
বছরখানেক আগে ওই বাসা থেকে এক ছে’লের লা’শ উ’দ্ধার করা হয়। তখন লুপা বলেছিলেন, ছে’লে আ’ত্মহ’ত্যা করেছে। এখন পর্যন্ত লুপার চারটি বিয়ের তথ্য পাওয়া গেছে। ‘প্রেস লেখা’ একটি মোটরসাইকেল ব্যবহার করতেন লুপা। সাংবাদিকদের সংগঠনের অনেক নেতার সঙ্গেও রয়েছে তার সখ্য।
এসএসসি পাস করা এই না’রী নিজেকে ‘অ’গ্নি টিভির’ কর্ণধার পরিচয়ে অ’সংখ্য মা’নুষের কাছে ‘সাংবাদিকতার পরিচয়পত্র’ বিক্রি করেও অর্থ হা’তিয়ে নিয়েছেন বলে অ’ভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি পটুয়াখালীর দুই ব্যক্তির কাছ থেকে তার বি’রুদ্ধে ১৩ লাখ টাকা হা’তিয়ে নেয়ারও তথ্য পেয়েছে ডি’বির ত’দন্তকারী দল।
অ’নুস’ন্ধানে জানা গেছে, ২০০৩ সালে পটুয়াখালীর গ’লাচিপা থা’নায় লুপা ও তার পরিবারের সদস্যদের বি’রুদ্ধে একটি হ’ত্যা মা’মলা হয়। পরে ২০১৩ সালে ওই মা’মলার অ’ভিযোগপত্রভু’ক্ত আ’সামি লুপা ও তার স্বজনরা ‘রাজনৈতিক বিবেচনায়’ রেহাই পান।
স্থানীয়রা বলছেন, লুপার বাবা হাবিবুর রহমান ওরফে নান্না মিয়া তালুকদারসহ পরিবারের আরো দুই সদস্য ১৯৭১ সালে শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন। বিএনপি-জা’মায়াত জো’ট সরকারের আ’মলে মা’মলা ও অ’ভিযোগপত্র দাখিলের বিষয়টিকে আওয়ামী পরিবারের সদস্য হিসেবে ‘রাজনৈতিক হ’য়রানি’ দা’বি করে তাদের রেহাই পেতে মূল ভূমিকার পালন করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা।
এ কাজে প্র’ভাবশালী এক ম’ন্ত্রীর সহযোগিতাও পেয়েছেন তারা। গ’লাচিপা থা’নায় মা’মলার ত’দন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, শাহিনুর নামে এক না’রী গ’লাচিপায় লুপার বাসায় কাজ করতেন। সেই সুযোগে লুপার স্বামী ও ভাই ওই গৃহক’র্মীর ও’পর নি’য়মিত যৌ’ন নি’পীড়ন চা’লাত।
পরবর্তী সময়ে শাহিনুর অ’ন্তঃস’ত্ত্বা হয়ে পড়লে বিষয়টি জানাজানি হয়। এরপর লুপা, তার স্বামী, লুপার বাবা ও দুই ভাই মিলে শাহিনুর ও তার শি’শুক’ন্যাকে অ’পহ’রণ করে ট্রলারে তু’লে শ্বা’সরো’ধে হ’ত্যার পর ব’স্তাব’ন্দি করে নদীতে ফে’লে দেয়।
এ ঘ’টনার ত’দন্তে লুপা, তার বাবা প্রয়াত হাবিবুর রহমান ওরফে নান্না মিয়া তালুকদার, তার দুই ভাই প্র’য়াত মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে লিটন তালুকদার, মোস্তাইনুর রহমান ওরফে লিকন তালুকদার, লুপার স্বামী রফিকুল ই’সলাম বাদল ওরফে শহীদ বাদল, সুজন, হাকিম আলী, সেরাজ মিয়া, আলী হোসেন, ইছাহাক আলী ওরফে ইছছেক আলীসহ বেশ কয়েকজনের স’ম্পৃক্ততার ত’থ্যপ্র’মাণ পেয়ে আ’দালতে অ’ভিযোগপত্র দা’খিল করা হয়।
সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, গলাচিপা উপজে’লা আওয়ামী লীগের তৎ’কালীন সভাপতি হারুন অর রশীদের প্রত্যয়নপত্র নিয়ে লুপা ও তার স্বজনরা এক প্র’ভাবশালী প্র’তিমন্ত্রীর সহযোগিতায় নিজেদের আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য হিসেবে প্রচার শুরু করেন। এ ঘ’টনায় সহযোগী একাধিক আ’সামির সা’জা হলেও লুপা ও তার স্বজনরা এ মা’মলা থেকে অ’ব্যাহতি পান।
গলাচিপা উপজে’লা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি হারুন অর রশীদ বুধবার রাতে বলেন, নান্না তালুকদার চি’হ্নিত রা’জাকার ও লু’টেরা ছিলেন। তবে ভু’লবশত তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের আওয়ামী লীগের নেকাকর্মী হিসেবে প্রত্যয়ন করা হয়েছিল। আমার সেক্রেটারি গোলাম মোস্তফা টিটুর ত’থ্যের ভিত্তিতে এ সি’দ্ধান্ত হয়েছিল।
একাত্তরে মু’ক্তিযু’দ্ধকালে নান্না তালুকদারের ভূমিকা জানতে চাইলে পটুয়াখালী জে’লা মু’ক্তিযো’দ্ধা ক’মান্ডের ডেপুটি ক’মান্ডার ও জয় বাংলা মু’ক্তিযো’দ্ধা পরিষদের চেয়ারম্যান নিজামউদ্দিন তালুকদার বলেন, গলাচিপার নান্না তালুকদারসহ ওই পরিবারের তিনজন চি’হ্নিত রাজাকার রয়েছেন। যারা পাকিস্তান হা’নাদার বা’হিনীর দোসর হিসেবে এ দেশের মু’ক্তিযো’দ্ধাদের ঘরবাড়ি ও সম্পদ লু’ট করেছে। রাজাকারের তালিকায় তাদের সবার নাম আছে।